গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ সম্পর্কে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ইডেন মহিলা কলেজের বিজ্ঞান অনুষদের সুপরিচিত বিভাগ গার্হস্থ্য অর্থনীতি।গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়টি এমন এক শিক্ষাধারা যা, জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি এর ১৭ টি লক্ষ্যের মধ্যে ১০টি লক্ষ্য অর্জনে প্রত্যক্ষ অবদান রাখতে সক্ষম।বিভাগের একাডেমিক ও সহপাঠ কার্যক্রমের কারনে কলেজে এর অবস্থান প্রশংসনীয়। এই কলেজে 1960 সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রী কোর্স নিয়ে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তিতে ক্রমান্বয়ে ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স এবং ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাষ্টার্স প্রথম পর্ব কোর্স এবং ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাষ্টার্স শেষ পর্ব কোর্স চালু হয়।সূচনা লগ্ন থেকেই এই বিভাগের ছাত্রীরা সফল ভাবে বি.এসসি. সম্মান এবং এম.এসসি. ডিগ্রী লাভ করছে। বর্তমানে এই বিভাগে প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণীর আসন সংখ্যা ১2০ টি এবং মাষ্টার্স শেষ পর্বের আসন সংখ্যা ২৩০টি। বর্তমানে এই বিভাগে প্রায় ৬০০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ণরত। এই বিভাগে কর্মরত রয়েছেন ১ জন অধ্যাপক, ২ জন সহযোগী অধ্যাপক, ১ জন সহকারী অধ্যাপক ও ১ জন প্রভাষক । বিভাগের সার্বিক দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনের জন্য রয়েছেন একজন সেমিনার সহকারী । বিভিন্ন বর্ষের মেজর কোর্স সমূহের ব্যবহারিক ক্লাস পরিচালনার জন্য রয়েছেন একজন খন্ডকালীন ল্যাব সহকারী।বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দৈনিক প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য রয়েছে ২ জন মহিলা অফিস সহায়ক ।
বর্তমানে চলমান ২০1৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যসূচী অনুযায়ী এই বিভাগের ছাত্রীদের সন্মান কোর্সে রয়েছে ১৩২ ক্রেডিট।ক্রেডিটের বিভাজন হলো – সম্মান প্রথম বর্ষে৩০ ক্রেডিট, দ্বিতীয় বর্ষে ৩০ ক্রেডিট, তৃতীয় বর্ষে ৩৬ ক্রেডিট, চতুর্থ বর্ষে ৩৬ ক্রেডিট। এই ১৩২ ক্রেডিটের মধ্যে ১০২ ক্রেডিট তত্ত্বীয়, ২০ ক্রেডিট ব্যবহারিক এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জনের লক্ষে রয়েছে একমাস ব্যাপী ২ ক্রেডিটের প্রাতিষ্ঠানিক ইনটার্ন কোর্স। বর্তমানে চলমান মাষ্টার্স শেষ পর্বের ২০১৭-২০১৮ পাঠ্যসূচী এবং ২০২১-২০২২ পাঠ্যসূচী অনুযায়ী ৩০ ক্রেডিট কোর্স পাঠ দান করা হয়। মাষ্টার্স কোর্সের থিসিস ও নন থিসিস দুটি ধারা রয়েছে।মাষ্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক সেমিনার কোর্স।
সন্মান শ্রেণীর প্রধান প্রধান পত্র সমুহ হলো–ফিলোসফি অব হোম ম্যানেজমেন্ট, আর্ট এন্ড ডিজাইন,ম্যাটারনাল এন্ড চাইল্ড হেলথ, ফুড এন্ড নিউট্রিশন,টেক্সটাইল এন্ড ক্লদিং, চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এন্ড গাইডেন্স, এনভাইরনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট এন্ড সাসটেইনেবিলিটি,বেসিক কাউন্সিলিং স্কিল, এন্টারপ্রেনিউরসিপ এন্ড স্মল বিজনেস,কমিউনিটি নিউট্রিশন এন্ড পাবলিক হেলথ ,মিল ম্যানেজমেন্ট, হিউম্যান নিউট্রিশন এন্ড ডায়টেটিক্স,ফুড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, এ্যাপলাইড আর্ট এন্ড টেক্সটাইল, , আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন, হাউজিংএন্ড ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন ইত্যাদি।
নন মেজর পত্র গুলি হল-হিস্ট্রি অফ দ্যা ইমারজেন্স অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বাংলাদেশ,এলিমেন্টারি বায়োকেমিষ্ট্রি , ইন্ট্রুডাকশন টু হিউম্যান ফিজিওলজি ,হাউজ হোল্ড ফিজিক্স, ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজি এবং ইংরেজী। মাস্টার্স শ্রেণীর পঠিত বিষয়সমূহ হলো –পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন,হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট,টেক্সটাইল মারচেন্ডাইজিং, এডভান্স স্টাডি অব আর্ট এন্ড ক্রাফট, রিসার্চ মেথোডলজি ,এপেডেমিওলজি, ক্লথিং কনসট্রাকশন। এই বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী মাষ্টার্স কোর্সে নন ক্রেডিট কোর্স হিসেবে স্বপ্রনোদিত হয়ে আই সি টি কোর্স অধ্যায়ন করে।
আনুষ্ঠানিক আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতধারার সাথে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকগণ নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে , যার ফলশ্রুতিতে বিভাগের দুটি শ্রেণী কক্ষে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে সকল শিক্ষক ক্লাস পরিচালনা করেন। এই বিভাগে একটি শ্রেণী কক্ষে রয়েছে একটি আধুনিক ইন্টারঅ্যাকটিভ স্মার্ট বোর্ড। শিক্ষাদানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী করে তুলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় করোনা মহামারি কালীন অনলাইন কার্যক্রমে ছাত্রীদের প্রানবন্ত উপস্থিতি এবং বিভাগের কার্যক্রম ছিল নিরবিচ্ছিন্ন । আজ আবধি অফলাইন ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইন ক্লাস চলমান রয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক ।
এই বিভাগের সকল বর্ষের ফলাফল ধারাবাহিক ভাবে সন্তোষজনক। ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের সন্মান চতুর্থ বর্ষ ছাত্রীদের মধ্যে পাসের হার ১০০ ভাগ এবং শতকরা ৬৪ ভাগ CGPA – 3 অর্জন করেছে। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের মাষ্টার্স শেষ পর্ব ছাত্রীদের মধ্যে পাশের হার শতকরা ৯৯ ভাগ।
এই বিভাগের ছাত্রীরা কলেজের অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথেও সংযুক্ত রয়েছে। তাই সাফল্য জনক ফলাফল লাভের পাশাপাশি এই বিভাগের ছাত্রীরা অন্যান্য বিভাগের ছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ২০২১- ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় (তিনজন ছাত্রী ) সফলতা অর্জন করে বিভাগের পরিচিতিকে উজ্জ্বল করেছে। এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায়ও রয়েছে আগ্রহ। ২০২১- ২০২২শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় দুইজন শিক্ষার্থী চুড়ান্ত পর্যায়ে সফলতা পেয়েছে। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সরকারী,বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সাথে কর্ম সংস্থান করতে পারছে। তাছাড়াও বিশেষায়িত পাঠ্যসূচীর কারণে বিভিন্ন ধরনের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে।তারা স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিভিন্ন কর্মসূচী,পোশাক শিল্পের বিভিন্ন শাখা, কারুশিল্পের বিভিন্ন শাখা, বিপনন, ফ্যাশন ডিজাইনিং, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠানের গুরূত্ব পূর্ণ কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। সর্বোপরি বিষয়টি বৃত্তিমূলক, স্বকর্মসংস্থান মূলক ও জীবনদক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে তাই শিক্ষার্থীরা দেশ ও সমাজের একটি কর্যকরী একক হিসেবে নিজেদের সক্ষম করে তুলেছে । ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর সুবিধা কাজে লাগিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ আপন প্রতিভায় সমুজ্জল ।
আমি এই বিভাগের ছাত্রীদের সার্থক কর্মজীবন কামনা করছি।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ
বিভাগীয় প্রধান
প্রফেসর গাজীরুমানা রহমান