ছায়াবীথি

দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ইডেন মহিলা কলেজের সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রটির নাম ছায়াবীথি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত নান্দনিক সত্ত্বাকে জাগ্রত ও বিকশিত করতে ছায়াবীথি এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। তাদের মেধা ও মননে সুরের অমিয় ফল্গুধারা এনে দেয় ছায়াবীথি। সংস্কৃতি চর্চা একজন শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল সত্ত্বায় সমৃদ্ধ ও প্রত্যয়ী করে গড়ে তুলে। তাই বিষয় ভিক্তিক জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি তাদের সহপাঠ্যক্রম কার্যাবলীতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নিয়মিত অনুশীলনে উৎসাহ দেয় ছায়াবীথি। নবীন প্রজন্মকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক জীবন বোধ তৈরী করতে সংস্কৃতি চর্চার কোন বিকল্প নেই। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই ছায়াবীথির পথ চলা শুরু।

২০০৪ সালে ছায়াবীথির সূচনা হয়। এই প্ল্যাটফরম এর সূচনা পর্যায়ে যাদের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয় তারা হলেন ইডেন মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর রওশন আরা রশিদ, অধ্যক্ষ প্রফেসর খুরশিদ জাহান হক, অধ্যক্ষ প্রফেসর মিনুফার চৌধুরী, অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলারা হাফিজ , অধ্যক্ষ প্রফেসর জাহান-ই-গুলশান, অধ্যক্ষ প্রফেসর তাহমিনা হোসেন, প্রফেসর দেওয়ান ইউনুস আলী, প্রফেসর সামসাদ বেগম, জনাব সুজিত নারায়ন কোঙ্গড়, ড. পূরবী রাণী সমাদ্দার, জনাব ড. মোছা: তাসলিমা খাতুন, জনাব সুলতানা সাদেক, জনাব জহুরাল হক, অধ্যাপক সাবরুনা আহমেদ এবং আরো অনেকে। ৫নং ভবনের নিচ তলায় একটি কক্ষে ছায়াবীথির কার্যক্রম শুরু হয়। ’ছায়াবীথি’র নামকরণ করেছেন তৎকালীন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর তাহমিনা হোসেন। ছায়াবীথি গঠনে প্রফেসর দিলারা হাফিজ এর উদ্যোগ ছিলো যথেষ্ট প্রশংসনীয়। এর কাঠামো পুনর্বিন্যাসের কৃতিত্ব দিতে হয় প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. স্বপ্না রায়কে। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ প্রফেসর মাহফুজা চৌধুরী ছায়াবীথিকে সুবিন্যস্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। অধ্যক্ষ প্রফেসর হোসনে আরা ছায়াবীথিকে সু-সজ্জিত করার জন্য অনুদান প্রদান করেন এবং তাঁর সার্বিক নির্দেশনায় এর নবরূপায়ণ হয়।

ছায়াবীথিতে মাসিক ২৫০ বেতনে নিয়মিত সপ্তাহে দুইদিন গান ও নাচের ক্লাস নেয়া হয়। গানের তালিম দেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী দিপ্তী সমাদ্দার। নৃত্য প্রশিক্ষনের দায়িত্বে আছেন এই কলেজেরই ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী অপর্ণা হাই তন্দ্রা। দর্শন বিভাগের অধ্যাপক শামীমা আক্তারের তত্ত্বাবধানে সপ্তাহে একদিন নিয়মিত আবৃত্তি চর্চা হয়। আর আমি সাবরুনা আহমেদ ডিবেটিং ক্লাবের মডারেটর হিসেবে সপ্তাহে একদিন বিতর্ক ও শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চার অনুশীলন করাই। কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি কমিটিকে ছায়াবীথির সকল কার্যক্রমকে সুচারুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। ছায়াবীথির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন প্রফেসর সাবরুনা আহমেদ (আহ্বায়ক), জনাব ড. তাছলিমা খাতুন (সদস্য), জনাব শামীমা আক্তার (সদস্য), জনাব শামীমা সুলতানা (সদস্য), জনাব মরিয়ম বেগম (সদস্য)।

কলেজে প্রতি বছর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ, রবীন্দ্র- নজরুল জয়ন্তী, স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবস ও নববর্ষ উদ্যাপনে ছায়াবীথির শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও স্বতঃস্ফুর্ততার সাথে অংশগ্রহন করে।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের এই সাংস্কৃতিক পদচারণা কলেজ প্রাঙ্গনেই সীমাবদ্ধ নয়, তাদের সৃজনশীল প্রতিভার স্বীকৃতি আসে বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় নাচ, গান, বিতর্ক, ও আবৃত্তিতে তাদের উজ্জল অংশগ্রহনে তাদের এই অর্জন আমাদের আনন্দিত ও গর্বিত করে। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রয়িা ভট্টার্চায্য এবং উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী বেগম এর সুচিন্তিত নির্দেশনা, আন্তরিকতা ও অনুপ্রেরণায় ছায়াবীথি আজ আরো ঋদ্ধ ও গতিশীল। আমরা ছায়াবীথি পরিবার তাদেও এই আনুকূল্যে কৃতজ্ঞ ও অভিভূত।

পরিশেষে, পরবর্তী প্রজন্ম যেন ইডেন মহিলা কলেজের গৌরবময় সাংস্কুতিক ঐতিহ্য বহন করে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারে সেই লক্ষে ছায়াবীথির উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করছি। সেই সাথে প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের আলোকোজ্জল আগামী প্রত্যাশা করছি।

ছায়াবীথি
প্রফেসর সাবরুনা আহমেদ
”এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে
এসো করো স্নান নবধারাজলে”